আমাদের ব্যবহারিক জীবন

 

আমাদের ব্যবহারিক জীবন

✔ব্যবহারিক জীবনের পরিচয়ঃ

-মানুষ যা বিশ্বাস করে তার প্রতিফলন ঘটে ব্যবহারিক জীবনে। 

-ঈমান হলো বিশ্বাস, ইসলাম হলো বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করা। (উদখুলু ফিসসিলমি কাফফা)

-ব্যবহারিক জীবন হলো ইসলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্র। এ জন্য মানুষের ব্যবহারিক জীবন সুন্দর করার গুরুত্ব রয়েছে।

আখিরাতের জীবনে সফলতার জন্য ইসলামের আলোকে ব্যবহারিক জীবন পরিচালনা করাও জরুরি। (মা ইয়ানফিজু মিন কাওলিন ইল্লা দাইহি রাকববুন আতিদ)

-রাসুল সা. নবুওয়াত লাভের পর, যে লোকগুলোর কাছে তার জীবনের কোনো দিক গোপন ছিল না; তারাই সর্বপ্রথম ইমান এনেছেন, তার নবুওয়াতের স্বীকৃতি প্রদান করেন। [স্ত্রী খাদিজা (রা.), বন্ধু হিসেবে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এবং আত্মীয় হিসেবে হজরত আলী (রা.)]

-নাজ্জাসীর দরবারে রাসুলের ব্যাপারে জাফর রাঃ এর ঘোষনা (নারিফু নাসাবাহু ও সিদকাহু ও আমানাতাহু ও আফাফাহু)

-জিন্দেগীর প্রতিটি মুহূর্ত রাসুলুল্লাহর সাথে কাটাতে হবে (বইঃ রাসুলুল্লাহর সাথে একদিন)

 

✔ব্যক্তিগত আচরণঃ

১. ঘুমঃ

-প্রাপ্ত বয়স্কদের ঘুম ৬-৮ ঘন্টা 

-দোয়া পড়া, এলার্ম (ঘুম ভেঙ্গে গেলে দোয়া)

-নিজে উঠে অন্যদের ডাকা

-তাহাজ্জুদের সময় উঠা (সাওতুত দিক, যওফুল/সুলুসুল লাইলি আখির)

-রাত ১০/১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া

-ঘুমের ক্ষেত্রে ডান কাত হয়ে, মাথার নিচে ডান হাত রেখে ঘুমানো

-লালা নিঃসরণ ও নাক ডাকার ক্ষেত্রে সচেতনতা

-বালিশের উপর আলাদা তোয়ালে ব্যবহার

-ঘুমানোর আগে মূল দরজা ও জানালা আটকানো, নিজের রুমের দরজা খোলা রাখা

-লাইট, আগুন, চার্জ দেয়া জিনিস বন্ধ করা


২. এস্তেঞ্জায় যাওয়াঃ 

-দোয়া (আল্লাহ দোয়া পাঠকারীদের সতরের বিষয়ে দুষ্ট জীনদের অন্ধ করে দেন)

-জুতা পরা, ব্যবহারের পর বেশি পানি ঢালা, টয়লেটের আশপাশ পরিস্কার রাখা

-একাধিক লোক থাকলে তাড়াতাড়ি বের হওয়া, টয়লেটের অভ্যাসটা ফজরের সময় না গড়ে উঠা

-জুতা কমেটের উপরে রাখা, সাবান ব্যবহার, পা দোয়া

-সব ধরনের টয়লেট ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া (বাংলা/ইংলিশ)


৩. ব্রাশ বা মেসওয়াক ব্যবহারঃ 

-একবেলা ব্রাশ ও বাকি ৪ ওয়াক্ত মেসওয়াক

-টুথপেষ্ট ও ব্রাশ কয়েক পরপর পরিবর্তন

-ব্রাশের ঝুড়ির যত্ন নেয়া

-বেসিন ও আয়না পরিষ্কার রাখা

-প্রত্যেকে আলাদা তোয়ালে ব্যবহার


৩. পোশাক পরিচ্ছদঃ

-শালীন কাপড় পরার ৪টি শর্ত (শরীর দেখা ও বুঝা যায় না, বিপরীত লিঙ্গের নয়, বিধর্মীদের নয়)

-পেছন লম্বা জামা পরা উত্তম (হাদিস)

-চুলের স্টাইল ভদ্রার পরিচায়ক

-বেশি বেশি নতুন কাপড় না কিনা 

-আবু বকর এবং ওমর ইবন আবদুল আজিজের মৃত্যু সময় কাপড়


৪. নামাজঃ

-খুশু খুজুর সাথে নামাজ আদায়

-নামাজের জনশক্তি ও পিতামাতার জন্য নাম ধরে দোয়া করা

-জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়

-দায়িত্বশীলের নামাজ জনশক্তি ও সাধারণ মানুষ খেয়াল করে

-সূর্য উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা ও ইশরাক পড়া (হাদিস)

-যোহরের জামায়াতে নামাজ পেতে সময় হাতে রেখে গোসলে যাওয়া

-মাগরিব ও এশা বাসার কাছাকাছি মসজিদে পড়া


৫. অধ্যয়ন ও রিপোর্ট সংরক্ষণঃ

-কুরআন ও হাদিস  অধ্যয়ন (জোরে তেলাওয়াত)

-ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ 

-শারিরিক ব্যায়াম

-সকালের ঘুম পরিহার

-সকালে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করা (সা/পাঠ্য)

-পত্রিকা পাঠ (দেশ, আন্তর্জাতিক ও বিশ্ব ইসলামী আপডেট জানা)

-খাওয়ার পর অধ্যয়ন করা এবং কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম (শেষ রাতে উঠা ব্যক্তির জন্য)

-বাদ মাগরিব থেকে পড়াশুনা শুরু করা

-নিজের ক্যারিয়ারের গোল ঠিক করে সে অনুযায়ী প্রচেষ্টা চলানো, পরামর্শ নেয়া

-ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইংরেজি ও আইটি দক্ষতা অর্জন


৬. খাবারঃ

-স্ট্রং ডায়েট নাসতা না করে পুষ্টিকর নাসতা করা

-খাওয়ার ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা, ডান হাতে খাওয়া (কুল বি ইয়ামিনিক)

-আগে খেলে পরিবার বা মেসের সবার জন্য ইনসাফ ভিত্তিক রেখে নিজের ভাগেরটা খাওয়া

-খাবারের আগে বা পরে পানি খাওয়া

-প্লেটে অল্প খাবার নিয়ে সবগুলো চেটে খাওয়া (অতিরিক্ত তেল থাকলে সরিয়ে নেয়)

-নিজের ঝুটাগুলো নিজেই ফেলা (হোটেলেও) এবং নিজেই প্লেট পরিষ্কার করা

-সবাই একসাথে খেতে বসা

-একা খেলে, খাবার পর ঢাকনা আটকানো

-৯টার মধ্যে রাতে খাবার খাওয়া, রাতে হালকা খাবার খাওয়া প্রয়োজন


✔পারিবারিক আচরণঃ

-পরিবারের সদস্যদের দ্বীন শিক্ষা (ও আনজির আশিরাতাকাল আকরাবিন)

-Good প্যারেন্টিং ও poor প্যারেন্টিং

-তাদের অল্পতে তুষ্ট থাকতে শিখানো

-পরিবারে সালামের প্রচলন (হাদিস)

-সুযোগমত পরিবারের কাজে সহায়তা (হাদিস)

-পারিবারিক সমস্যার সমাধান (আয়েশা ও সাফিয়ার ঘটনা, মহিলাদের স্বামী পরিবারে হক)

-একে অপরের পালস্ বুঝতে হবে (আয়েশা কখন রাগ করতেন রাসুল বুঝতে পারতেন)

-অধ্যাপক মফিজের তার স্ত্রীর জন্য নসিহত 

-অপ্রয়োজনে বেশিক্ষণ বাহিরে না থাকা

-নিজের টেবিল, বেড, জামা কাপড় গোছানো

-বাসায় থাকা কারো কাছে বলে যাওয়া

-বাসায় ফিরেই জামা কাপড় চেইঞ্জ করা ও সুযোগ থাকলে পরিহিত কাপড় ধুয়ে ফেলা, ব্যবহৃত মোজা সাবধানে রাখা (শহীদ কাদের মোল্লা এমন ছিলেন)

-গোসল দেয়ার আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মূলক কাজ করা (রুম, টয়লেট, বাগান)

-গোসলে সাবান ব্যবহারে সতর্কতা। একইসাথে ময়লা হাতে সাবান ব্যবহারে সতর্কতা

-শ্যাম্পুর প্যাকেটগুলো জমা করে না রাখা

-ভিজা কাপড় ও তোয়ালে শুকাতে দেয়া

-তোয়ালে, বিছানা চাদর, বালিশ কাভার কিছুদিন পরপর ধুয়ে দেয়া

-তেল বা লোশন ব্যবহার করা

-আসরের পর টিউশনি, পড়াশুনা, ব্যক্তিগত কাজ না রেখে দাওয়াতি কাজে বের হওয়া

-পকেটে কিছু না কিছু দাওয়াতি উপকরণ রাখা

-নিজের আয় ও ব্যয়র সামঞ্জস্য রাখা

-অতিরিক্ত আয় ও আয়ের উৎসগুলো যাছাই

-অপরের কাছে ধার চওয়ার প্রবণতা কমানো

-ধার নিলেও ওয়াদা মাফিক পরিশোধ করা

-মীরাস বন্টনে ইনসাফ করা

-আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খবর


✔সাংগঠনিক আচরণঃ

-পরিকল্পিত কাজ নিয়ে সফর করা

-সফরে বের হওয়া (রুমাল, চিরুনী, মেসওয়াক, সুগদ্ধি) 

-সফরের বের হওয়ার ও ফিরে আসার দোয়া

-সংগঠন ও কাজ নিয়ে টেবিল ওয়ার্ক করা

-প্রত্যেক বৈঠকে প্রস্তুতিসহ অংশগ্রহণ 

-নোট বা খসড়া পরিকল্পনা গ্রহণ করা

-সফর বা ভ্রমণে কম খাওয়া, অপ্রয়োজনীয় খাাবার পরিহার

-নিজের সিডিউলের বাহিরে পারিবারিক কাজ হাতে রাখা

-বন্ধু, আত্মীয়-প্রতিবেশীর সাথে সাক্ষাৎ হলেও যাতে উদ্দেশ্য থাকে আদর্শ প্রচার

-জনশক্তিদের কর্তৃত্ব নয় বরং নসিহতের মাধ্যমেই পরিচালনা করা

-পরিবেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানা

-সুধী ও অন্যান্য মুরুব্বিদের সাথে সাক্ষাতে শুধু কালেশনের কথা না বলে সার্বিক খোঁজ খবর নেয়া

-বিকেলের নাসতাকে চা-চক্রে রূপদান

-দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্যে খেলাধুলা করা

-সন্ধার পর কোন প্রোগ্রাম না রাখা

-অযথা গল্প গুজবে বাহিরে সময় না কাটানো

-আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনার সিডিউল করা

-মোবাইল একেবার সাইলেন্ট বা বন্ধ করে না ঘুমানো

-রাতে মোবাইল রিসিভ করায় অভ্যস্ত হওয়া


✔সামাজিক আচরণঃ

-মিষ্টভাষী, সদালাপী ও কোমল হৃদয়ের হওয়া (মাওলানা নিজামী)

-বিরোধীদের মন্দের জবাব ভালো দিয়ে দেয়া (বাদাল ইসলামু গরিবান, ওলা তাসতা বিল...)

-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে পর্দার বিধানের ক্ষেত্রে সচেতনতা

-কর্মক্ষেত্রে সবার সাথে মোয়ামেলাত

-সকল ধর্ম দল মত নির্বিশেষে সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা

-সামাজিক জীবনে আমানতদারিতা, ওয়াদা পালন ও লেনদেন ঠিক রাখা

-মসজিদ কমিটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে সর্বাগ্রে অংশগ্রহণ

-সকলের সাথে পরিচিতির জন্য সালাম ও আপ্যায়ন বেশি কার্যকরী 

-কোন বিরোধ মীমাংসায় ইনসাফের আশ্রয় নেয়া

তাতে নিজেদের ক্ষতি হলেও

-সমাজের মানুষগুলোকে সাধ্যমত সহায়তা

-জানাযা, রোগী, দুর্যোগকালীন ব্যক্তিগত সহযোগীতা

Post a Comment

0 Comments

Close Menu