হযরত আবদুল্লাহ যুল বাজাদাইন (রা:) এর শাহাদাতের মর্যাদা সংক্রান্ত হাদীস

 



(সীরাতে ইবনে হিশাম ৫২)

অনুবাদ:

তিনি (ইবনে ইসহাক) বলেন, আমার নিকট মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম বিন আল হারিস আত তাইমি (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন, আমি তাবুক অভিযানে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে থাকাকালিন সময়ে একদিন মাঝরাতে জেগে উঠলাম। সহসা দেখলাম সেনা শিবিরের একপাশে আগুনের শিখা । আমি ঘটনাটি দেখার জন্য সেই শিখার কাছে চলে গেলাম। সেখানে যেয়ে দেখি, রাসুলুল্লাহ (সঃ), আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ও ওমর ফারুক (রাঃ) উপস্থিত। আরও দেখি, আব্দুল্লাহ জ্বল বিজাদাইন আল মুজনী ইন্তেকাল করেছেন, তাঁরা তাঁর জন্য কবর খনন করছেন । রাসূলুল্লাহ (সা) কবরের ভিতরে এবং আৰু বকর সিদ্দিক (রা) ওমর ফারুক (রা) তাঁর লাশ কবরের ভিতরে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট নামিয়ে দিচ্ছিলেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছিলেন, তোমাদের ভাই (আব্দুল্লাহ জুল বিজাদাইন) কে আমার নিকটবর্তী করে দাও। তাঁরা তাঁকে কবরের ভিতরে নামিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন তাকে পাশ ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। করলেন, তখন বললেন, হে আল্লাহ! আমি আজ রাত পর্যান্ত তার উপর খুশী ছিলাম। অতএব তুমিও তার প্রতি রাজি-খুশি থাকো ।

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ(রাঃ) বললেন, হায়! আমি যদি এই কবরের বাসিন্দা হতাম। ইবনে হিশাম বলেন, তাঁর নাম জুল বিজাদাইন হওয়ার কারণ এই ছিল যে, তিনি ইসলামের দিকে এগিয়ে আসছিলেন, তখন তাঁর গোত্র তাঁকে এর থেকে বাধা দেয় তারা তাঁকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দিতে থাকে। শেষ পর্যান্ত তারা তাঁকে বিজ্ঞাদ পরিয়ে ছেড়ে দেয়।


বিজ্ঞাদ অর্থ মোটা খসখসে কম্বল। তিনি সেই অবস্থায় তাদের হাত থেকে পালিয়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট চলে আসেন। তঁনি যখন রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট পৌঁছান তখন তিনি কম্বলটি দুই টুকরা করে এক টুকরা পরিধান করেন এবং অন্য টুকরা গায়ে জড়িয়ে নেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সম্মুখে উপস্থিত হন। এজন্য তাকে জুল বিজ্ঞাদাইন (দুই টুকরা কম্বল জড়ানো) নামে নামকরণ করা হয়। বিজাদ শব্দের আর একটি অর্থ চট। ইবনে হিশাম কবি ইমরুল কায়েসের কবিতা উদ্ধতি পেশ করেছেন।

অর্থ-প্রথম বৃষ্টির মধ্যে আবান পাহাড় যেন চট জড়ানো এক বিশাল মানুষ।

এই কবিতায় বিজ্ঞান অর্থ চট। বিজ্ঞাদাইন অর্থ দুই টুকরা চট জড়ানো।


আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) এর পরিচিতিঃ

তিনি রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর প্রসিদ্ধ ১ম স্তরের সাহাবি। ৬ষ্ঠ ইসলাম গ্রহনকারী বলে উল্লেখ করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর ১৪ বছরের ছোট । ৫৯৪ খৃষ্টাব্দে তামিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেণ তিনি কুফার কাজী হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি ৬৫০ খৃষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন।

তিনি কুরাইশ দের সর্বপ্রথম কুরআনের সূরা রহমান তেলাওয়াত করে শুনান। যার কারনে তিনি ব্যাপক প্রহৃত হন। তিনি বলেছেন, তারা আমার নিকট তখন অতিতুচ্ছ মনে হচ্ছিল। অনুমতি দিলে আমি আবার তাদেরকে তেলাওয়াত শুনাব।

তিনি কুরাইশ নেতা উকবা বিন আবু মুআইত এর ছাগল চরাতেন। দুইজন ব্যাক্তি তার নিকট ছাগলের দুধ পান করতে চান।তিনি বলেন, আমি এই ছাগলের মালিক নই। তার আমানত দারিতে ঐ দুই জন খুশি হন। পাঁঠার সংস্পর্শে যায়নি এমন ছাগল দেখিয়ে দিতে বলেন। দেখিয়ে দিলে একজন সেই ছাগলের বাটে স্পর্শ করলে কিছু দুধ জমা হয়। তা উভয়ে পান করেন এবং আব্দুল্লাহ বিন মাসউদকে পান করতে দেন। তিনি (আব্দুল্লাহ বিন। মাসউদ) বিস্মিত হন এবং পান করেন। এই দুই জন ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সঃ) এবং আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ)। অল্প দিনের মধ্যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) এর খাদেমে পরিণত হন রাসূলুল্লাহ (সা) জুতা মেসওয়াক ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য তাঁর সাথে বহন করতেন বাহিরে ও বাড়িতে তাঁর সঙ্গী হিসেবে অবস্থান করতেন।

হযরত ওমর (রা) ২০ হিজরি সনে তাঁকে কুফার কাজী নিয়োগ করেন। দীর্ঘ দশ বছর তিনি আব্দুল্লাহ বিন

মাসউদ (রা)] এই দায়িত্ব পালন করেন। হযরত ওসমান (রা) এর খেলাফতের ১ম অর্ধেকের পর এই দায়িত্ব থেকে তিনি অব্যহতি পান । তার পর মদীনায়

অবস্থান করতে থাকেন। ৩২/৩৩ হিজরি সনে তিনি ইন্তিকাল করেন। তিনি কুফা থেকে আসার পথে আবু জার গিফারী (রা) এর ইন্তিকালের পর তার জানাযা পড়ান।

الله اعلم بالصواب --রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর নামাযের কিরাত শ্রবণ করেন। এবং প্রশংসা করেন।তিনি ১৯৮৯ টি হাদিস বর্ণনা করেন।

গ্রন্থাকার পরিচিতিঃ

ইবনে হিশামের পরিচয়ঃ

আবু মুহাম্মাদ 'আবদ আল-মালিক বিন হিশাম বা ইবনে হিশাম একজন বিখ্যাত ও প্রাচীন সীরাত সংকলক। তিনি ইবনে ইসহাকের সংকলিত সীরাত বা মুহাম্মদ(সা.) এর জীবনীকে পুনর্সম্পাদনা করেন যা সিরাতে ইবনে হিশাম নামে পরিচিত। ইবনে ইসহাকের সীরাতটি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ইবনে হিশাম ও আল তাবারীর পরিবর্তিত সংষ্করণে এটি এখনো জীবিত আছে। বর্তমানে তার সীরাত গ্রন্থকে প্রামণ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

ইবনে হিশাম বসরায় তার শৈশবকাল অতিবাহিত করেন এবং পরবর্তীতে মিশরে চলে আসেন।

তার কাজঃ

আস-সীরাহ আন-নাবাবিয়াহ, ইবনে ইসহাকের সীরাতের সম্পাদিত সংস্করণ (অনুরুপ নয়)।
এছাড়াও তিনি দক্ষিণ আরবের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন যার নাম "কিতাব আল-তিজান লি মা'রিফাতি মুলুক আল-জামান" (রাজমুকুটের বই, যুগের সম্রাটদের জানার জন্য)

মৃত্যুঃ

২১২/২১৮ এ.এইচ/৮২৮ অথবা ৮৩৩ এ.ডি


হাদিসের সংঙ্গা ও প্রকারভেদ:

১/ কওলী, ফেনী ও তাকরীরী 

২/ মারফু, মাওকুফ ও মাকতু। 

৩/মুতাওতির মাশহুর আজীজ গারিব। 

৫/মুনকাতি,মুআদাল মুআল্লাক মুরসাল।

-পেশকৃত হাদীসটি মওকুফ/হাসান/যয়ীফ।


ব্যাখ্যা:

১. ইসলাম গ্রহনের পূর্বে তার নাম ছিল আব্দুল উজ্জা আল মুজানি । মুজাইনা গোত্রে জন্য গ্রহণ করায় তাকে মুজানি বলা হয়। তিনি ১৬ বৎসর বয়সে ইসলাম গ্রহন করেন। তিনি তাঁর জীবনে খুবই ঐসয্যের অধিকারী ধনী যুবক ছিলেন। তিনি ছোট থাকতে তাঁর পিতা মাতা উভয়ে ইন্তিকাল করেন।

তাঁর চাচা তাকে লালন পালন করেন । তিনি যুবকদের মধ্যে বিবেচনা সম্পন্ন যুবক ছিলেন। তিনি উন্নত, মুল্যবান ও সৌন্দয্য মন্ডিত পোষাক পরিধান করতেন সিরিয়া থেকে তার উদ্দেশ্য যে সকল মূল্যবান পোষাক। পরিচ্ছেদ নিয়ে আসা হতো, তিনি সেই পোষাক পরিধান করতেন। মুজাইনা গোত্রে যে সময় একটি ছোট খচ্ছরের মালিক যুবককে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ মনে করা হতো সে সময় তিনি একমাত্র যুবক ছিলেন, যিনি অনেক ঘোড়ার মালিক ছিলেন। তার চাচা মুজাইনা গোত্রে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন ।


তাঁর ইসলাম গ্রহন সর্বোত্তম ও বিস্ময়কর ঘটনা-

তাঁর বয়স যখন ১৬ বৎসর পূর্ণ হয়, সেই সময় সাহাবীগণ (রা) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে চলে যেতে শুরু করেন। তারা হিজরত করার পথে সুজাইনা গোত্রের উপর দিয়ে অতিক্রম করতেন। তারা খুব দ্রুত অতিক্রম করতেন। কেননা কুরাইশ কাফেররা তাদের সাথে মিলিত হয়ে ধরার সম্ভবনা ছিলো। একদিন একজন সাহাবীর হিজরত করার মধ্যে তার মুখোমুখী হন এবং তার নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। তিনি তৎক্ষনাৎ ইসলাম কবুর করেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি তাদের নিকট পবিত্র কুরআন থেকে কিছু শিক্ষা দেয়ার আবেদন করেন। তারা বললেন, আমরা তোমার সাথে সময় দিতে পারবো না। কেননা কুরাইশরা আমাদের ধরে ফেলতে পারে। তবে তুমি যদি কুরআন শিখতে ইচ্ছা কর, তাহলে আমাদের সাথে রাস্তায় মিলিত হয়ে শিক্ষা গস্খহনকরতে পারো। তিনি তাদের পিছনে পায়ে হেটে চলতে লাগলেন। তাঁরা কুরআন তেলাওয়াত করতেন আর তিনি তাদের পিছনে ১৫ কিলোমিটারের মতো দূরত্ব পর্যন্ত যেয়ে কুরআন তেলোওয়াত শিক্ষা করতেন।তারপর মুজাইনা গোত্রে ফিরে আসতেন। পরবর্তী দিনে পুনরায় মুজাইনা গোত্রের সীমানায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করতেন, কোন সাহাবী হিজরতের পথে যায় কিনা? তখন তিনি তাকে বলতেন, আমাকে কিছু কুরআন শিক্ষা দাও। তাছাড়া গতদিন তিনি যেটুকু কুরআন হেফজ করেছেন, তা তার নিকট তিলাওয়াত করে। পড়ে শুনাতেন। তখনি তিনি কুরআনের একাধিক সূরা শিক্ষা লাভ করেন।

একদিন তাঁর নিকট একজন সাহাবী এসে বলেন, তুমি কেন আমাদের রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট হিজরত করছো না? তিনি বললেন, আমার চাচা ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত আমি হিজরত করতে চাচ্ছি না। যেহেতু। তিনি আমার লালন পালন করেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে আমি হিজরত করবো না।

মুজাইনা গোত্রে তিন বৎসর অতিবাহিত হলো। তিনি তার ইসলাম গ্রহণ কে গোপন রেখে ছিলেন। তার চাচার সাথে কথা বলার জন্য সময় ও সুযোগ মুজতে ছিলেন । তার কাছে যে মুহাম্মদ (সা) এর নিয়ে আসা নতুন স্বীন পৌঁছেছে, তা তার চাচা অবিহিত করাতে চান।তিনি প্রতিদিন চাচাকে দ্বীনের ব্যপারে দাওয়াত দিচ্ছিলেন এবং তার কথা শুনতে প্রতাখ্যান করতে ছিলেন।যখন তিনি নামাজ আদায় করতে ইচ্ছা করতেন তখন মরুভূমিতে বহু দূরে চলে যেতেন যাতে কেহ দেখতে না পায়। এই অবস্থায় তিন বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি চাচার নিকট যেয়ে বললেন, আমি অনেক বিলম্ব করেছি।হে চাচা। আপনি কি ইসলাম গ্রহণ করতে বিলম্ব করবেন?

আমি নবীর বিচ্ছেদ সহ্য করতে পারছি না। আমি আপনাকে সংবাদ দিতে চাচ্ছি যে, আমি ৩ বৎসর যাবৎ কালিমায়ে তাওহীদ গ্রহণ করেছি। আমি এখন আল্লাহর রাসূলের নিকট হিজরত করছি।

আমি চাই যে, আপনি আমার সাথে থাকবেন। আপনি যদি ইসলাম গ্রহণ না করেন তাহলে হিজরত করতে আমাকে কোন বাধা দিতে পারবেন না। এ কথায় তার চাচা খুবই রাগান্বিত হয়ে বললেন। তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ করতে চাও তাহলে আমি তোমার মালিকানাধীন সকল সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে মুক্ত করে দিব । তখন তিনি বললেন, আপনার যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আমি কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (সা) উপরে কোন কিছুই প্রাধান্য দিতে পারবো না। তখন চাচা বললেন, তুমি যদি ইসলামের উপর দাঁড়িয়ে থাকো, তাহলে আমি তোমাকে সব কিছু থেকে মুক্ত করলাম। এমনকি তোমার পরিধেয় বক্স ছিনিয়ে নিলাম। এরপর উঠে তার পরিহিত সকল পোশাক খুলে নিলেন। তখন আব্দুল্লাহ বললেন, হে আমার চাচা। আপনি আমার সাথে যে ব্যবহারই করেন না কেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, অবশ্যই আমি আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকটে হিজরত করে চলে যাব।


মরুভূমিতে উলঙ্গের মতো অবস্থায় তার হিজরত শুরু হল। এমনকি নিজের খসখসে মোটা কম্বল দুই টুকরা করে এক টুকরা পরিধান করলেন আর এক টুকরা কম্বল গায়ে জড়িয়ে নিলেন। এমনকি যদিনায় পৌঁছে ফজরের নামাজ মসজিদে জমায়াতে আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) প্রতিদিনের অভ্যাস অনুযায়ী নতুন হিজরত করে আসা ব্যক্তিদের খোজ খবর নিতেন। সেদিন রাসূলুল্লাহ (সা) জুল বিজাদাইন কে দেখে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কে? আব্দুল্লাহ বললেন আমার নাম আব্দুল উজ্জা। তখন রাসূল (সা) বললেন, তুমি চটের মত এমন খসখসে কম্বল পরেছ কেন? তিনি বললেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি তাই আমার চাচা আমার মালিকানাধীন সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। এমনকি আমার পোশাক পরিচ্ছেদও। আমি পথে মোটা কম্বলের এই দুই টুকরা ছাড়া পরিধান করার আর কিছু পায়নি। তাই আমি আপনার কাছে কম্বলের দুই টুকরা পরিধান করেই উপস্থিত হয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, তোমার সাথে এই ব্যবহার করা হয়েছে? তিনি বললেন হ্যাঁ। তখন রাসুল (সঃ) উঠে বললেন আজ থেকে তোমার নাম আব্দুল্লাহ জুল বিজাদাইন, তোমার নাম আব্দুল উজ্জা নয়। আল্লাহ তোমাকে মোটা কম্বলের দুই টুকরার পরিবর্তে জান্নাতের চাদর পরিধান করাবেন। তুমি তা যেভাবে ইচ্ছে পরিধান করতে পারবে।


তার কঠিন দরিদ্রতার কারণে তিনি ছুফ্ফা বাসীদের বাসস্থানে বসবাস করতেন। তা ছিল রাসুলের ঘরের পেছনে মুহাজির গরীবদের বাসস্থান। তার বয়স তখন ২৩ বছর। তাবুক যুদ্ধের ঘোষণা আসলে তিনি রাসুল (সঃ) এর সাথে এই অভিযানে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুলা আপনি আমার জন্য দোয়া করুন। আমার যেন শাহাদাতের মৃত্যু হয়। তখন রাসুলুল্লাহ (সঃ) দুই হাত উঠিয়ে দোয়া করতে শুরু করলেন। হে আল্লাহ! তুমি আব্দুল্লাহর রক্তকে কাফেরদের তরবারির উপরে হারাম করে দাও। আব্দুল্লাহ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো এই দোয়া চাই না। আমি তো শাহাদাত কামনা করি। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে আব্দুল্লাহ। আল্লাহর কিছু বান্দা আছে, যারা আল্লাহর পথে বের হয় এবং রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাঁরা শহীদ। আর কিছু বান্দা আছে, যারা আল্লাহর পথে বের হয় অতঃপর ঘোড়া থেকে পড়ে মারা যায়, তারাও শহীদ। সম্ভবত তুমি জ্বর আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে শহীদ হবে। আব্দুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে তাবুক যুদ্ধে উপস্থিত হয়ে মুসলমানদের অনেক সাহায্য করেন। তাদের প্রত্যাবর্তন এর পথে আব্দুল্লাহ কঠিন জ্বর আক্রান্ত হয়। এবং মৃত্যুর যন্ত্রণা অনুভব করতে শুরু করেন।


আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) আব্দুল্লাহ জুল বিজাদাইন এর মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করেন। আমি গভীর অন্ধকার ও কনকনে শীতের রাত্রে ঘুমিয়েছিলাম। আমার ঘুমিয়ে থাকার মধ্যে আমার তাবুর বাইরে

গর্ত খনন করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বিস্মিত হলাম, এই অন্ধকারও ঠান্ডার মধ্যে কে গর্ত খনন করছে। আমি জাগ্রত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ), আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ) এবং ওমর ফারুক (রাঃ) কে তাদের তাবুতে তালাশ করলাম। কিন্তু তাদেরকে পেলাম না। আমি বিস্মিত, হলাম তারা কোথায়। গিয়েছে। আমি বেরিয়ে পড়লাম। খোঁজ করতে করতে দেখি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ও হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) প্রদীপ ধরে রেখেছেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) কবর খনন করছেন। আমি তার কবর খনন করা অবস্থায় তার নিকট যে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর মোবারক চেহারা আমার দিকে উঠালেন। আমি দেখতে পেলাম, তার চক্ষুদ্বয় দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বললেন তোমার ভাই জুল বিষাদাইন (দুই টুকরা কম্বল ওয়ালা) ইন্তেকাল করেছেন। আমি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি প্রদীপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর রাসূলুল্লাহ (সঃ)কে কবর খনন করার মত কষ্টদায়ক কাজ করতে দিচ্ছেন? তখন আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) নিজেই আব্দুল্লাহর কবর খনন করা ছাড়া অন্য কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না।


রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুই হাতে জুল বিজাদাইনের কবর খনন করে সেই কররে নেমে তার দেহ মোবারক সেই কবরে শায়িত করলেন। যাতে কবরটি জুল বিজাদাইন এর জন্য অনুগ্রহের কারণ হয়। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে তার দুই হাত হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ) এর দিকে তুলে বললেন, তোমরা উভয় তোমাদের এই ভাইকে আমার নিকটে দাও। তার প্রতি দয়া-পরবশ হয়ে বললেন, আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসতো। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে দেখেছি, তিনি লাশ ধরেছেন এবং কাফনের উপর তার চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। তিনি চার তাকবীর দেন এবং বলেন, হে আব্দুল্লাহ। আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। তুমি আল্লাহর প্রতি অনুগত ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতকারী। তারপর তিনি তাঁর মাথাকে আসমানের দিকে তুলে বললেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে সাক্ষী রাখছি, নিশ্চয় আমি জুল বিজাদাইন এর উপরে রাজি ও খুশি আছি। তুমি তার প্রতি রাজি-খুশি থাকো।


আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি আমি ঐ দিন আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম, আমি যদি এই কবরের অধিবাসী হতে পারতাম।

আল্লাহ ওই যুবকের উপর অনুগ্রহ করুন। যার সামনে দুনিয়ার সকল স্বাদ থাকা সত্ত্বেও দ্বীনের কারণে তা ত্যাগ করতে পেরেছে। আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর সন্তুষ্টির অধিকারী হয়েছে। এবং সে আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছে। তার ইসলাম গ্রহনের বয়স মাত্র ৭ বছর। আমাদের মধ্যে বহু ব্যক্তিকে আব্দুল্লার জন্য দেওয়া সাত বছরের চাইতে অনেক বেশি বছর দান করবেন। আল্লাহ দেখবেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সেই সময় গুলোতেআমরা কি করবে। অতএব হে আল্লাহ তুমি আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে দেখিয়ে তার অনুসরণ করার তৌফিক দাও। মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে দেখিয়ে তা বর্জন করার তৌফিক দাও এবং আমাদেরকে ফেতনায় না জড়িয়ে তোমার কাছে তুলে নাও।

Post a Comment

0 Comments

Close Menu