সুরা মুনাফিকুন (৯-১১)

 আরবী ও অনুবাদঃ

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡہِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿۹﴾

‘হে মুমিনগণ ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান–সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।

وَ اَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ اَحَدَکُمُ الۡمَوۡتُ فَیَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡ لَاۤ اَخَّرۡتَنِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَ اَکُنۡ مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿۱۰﴾

আর আমরা তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা থেকে ব্যয় করবে। তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগে। (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে) ‘হে আমার রব ! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য অবকাশ দিলে আমি সাদাকাহ দিতাম ও সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম !

وَ لَنۡ یُّؤَخِّرَ اللّٰہُ نَفۡسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُہَا ؕ وَ اللّٰہُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ {۱۱}

কিন্তু নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কখনো কাউকেও অবকাশ দেবেন না। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।


সুরা পরিচিতি:

সুরার নাম- মুনাফিকুন

সুরা নং- ৬৩

মোট আয়াত- ১১

মোট টিকা- ১৮ (তাফহীম)

রুকু- ২

পারা- ২৮

অবতীর্ণ- মদিনা

পূর্ববর্তী সুরা- জুমুয়া

পরবর্তী সুরা- তাগাবুন


নামকরণ: 

সুরার প্রথম আয়াতে اِذَا جَآءَكَ الۡمُنٰفِقُوۡنَ قَالُوۡا نَشۡهَدُ اِنَّكَ لَرَسُوۡلُ اللّٰهِ ۘ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ اِنَّكَ لَرَسُوۡلُهٗ ؕ وَ اللّٰهُ یَشۡهَدُ اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ لَكٰذِبُوۡنَ

[যখন তোমার কাছে মুনাফিকরা আসে, তখন বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই তুমি তাঁর রাসূল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী]

এর إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ শব্দ থেকে এ সূরার নাম গ্রহণ করা হয়েছে 'মুনাফিকুন'। এটি এ সূরার নাম এবং বিষয়বস্তু শিরোনামও। কারণ এ সূরায় মুনাফিকদের কর্মপদ্ধতির সমালোচনা করা হয়েছে।

*মুনাফিকের পরিচয়


আনুষাঙ্গিক বিষয়:

আল কুরআনে 'মুমিনুন' নামে সুরা আছে আবার 'কাফিরূন' নামে সুরা আছে।

এই দুইয়ের মাঝামাঝি ক্যাটাগরী 'মুনাফিকুন' নামে সুরা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ইসলামের বিপক্ষে অবস্থানকারী বিভিন্ন জাতিকে সম্বোধন করে কুরআন আয়াত নাযিল হয়েছে।

ইহুদি- ও ক্বলাতিল ইয়াহুদানা উজাইর ইবনুল্লাহ

নাসারা- ও ক্বলাতিন নাসারা মাসিহুব নুল্লাহ

ইহুদি ও মুশরিক- লাতা জিদান্না আশাদ্দান্নানি..

আহলে কিতাব- কুল ইয়া আহলাল কিতাবি...


নাযিল হওয়ার সময়কাল: 

বনী মুসতালিক যুদ্ধভিযান* থেকে রসূলুল্লাহ সা. এর ফিরে আসার সময় পথিমধ্যে অথবা মদীনায় পৌছার অব্যবহিত পরে এ সূরা নাযিল হয়েছিল। 

৬ হিজরীর শা’বান মাসে বনী মুসতালিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল একথা আমরা সূরা নূরের ভূমিকায় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ বর্ণনা করেছি। এভাবে এর নাযিল হওয়ার সময় সঠিকভাবে নির্দিষ্ট হয়ে যায়।


ঐতিহাসিক পটভূমি: 

-যে বিশেষ ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে এ সূরা নাযিল হয়েছিল তা আলোচনার পূর্বে মদীনার মুনাফিকদের ইতিহাসের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন। 

-ঐ সময়ে যে ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল তা আদৌ কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা ছিল না। 

-তার পেছনে ছিল একটি পুরো ধারাবাহিক ঘটনা প্রবাহ যা পরিশেষে এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছিল। 


-পবিত্র মদীনা নগরীতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পূর্বে আওস ও খাযরাজ গোত্র দুটি পারস্পরিক গৃহযুদ্ধে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব মেনে নিতে প্রায় ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। 

-তারা যথারীতি তাকে বাদশাহ বানিয়ে তার অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও শুরু করেছিল। এমন কি তার জন্য রাজ মুকুটও তৈরী করা হয়েছিল। 

-এ ব্যক্তি ছিল খাযরাজ গোত্রের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালূল। 

-মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, খাযরাজ গোত্রে তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব ছিল সর্বসম্মত এবং আওস ও খাযরাজ ইতিপূর্বে আর কখনো একযাগে এক ব্যক্তির নেতৃত্ব মেনে নেয়নি। (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৪, । 


-এই পরিস্থিতিতে ইসলামের বাণী মদীনায় পৌঁছে এবং এই দুটি গোত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে

-হিজরতের আগে আকাবার দ্বিতীয় বাইয়াতের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন মদীনায় আগমনের জন্য আহবান জানানো হচ্ছিল তখন হযরত আব্বাস ইবনে উবাদা ইবনে নাদলা (রা.) আনসারী এ আহবান জানাতে শুধু এ কারণে দেরী করতে চাচ্ছিলেন যাতে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইও বাইয়াত ও দাওয়াতে শামিল হয় এবং এভাবে মদীনা যেন সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। 

-কিন্তু যে প্রতিনিধি দল বাইয়াতের জন্য হাজির হয়েছিল তারা এই যুক্তি ও কৌশলকে কোন গুরুত্বই দিলেন না এবং এতে অংশগ্রহণকারী দুই গোত্রের ৭৫ ব্যক্তি সব রকম বিপদ মাথা পেতে নিয়ে নবী (সা.) কে দাওয়াত দিতে প্রস্তুত হয়ে গেল। (ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৯) 


-এরপর নবী (সা.) যখন মদীনায় পৌছলেন তখন আনসারদের ঘরে ঘরে ইসলাম এতটা প্রসার লাভ করেছিল যে, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই নিরূপায় হয়ে পড়েছিল। 

-নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব রক্ষার জন্য তার নিজের জন্য ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। তাই সে তার বহু সংখ্যক সহযোগী ও সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। 

-এদের মধ্যে উভয় গোত্রের প্রবীণ ও নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকেরা ছিল। অথচ তাদের সবার অন্তর জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের অন্তর্জ্বালা ও দু:খ ছিল অত্যন্ত তীব্র। 

-কারণ সে মনে করতো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার রাজত্ব ও বাদশাহী ছিনিয়ে নিয়েছেন। 

-তার এই মুনাফেকীপূর্ণ ঈমান এবং নেতৃত্ব হারানোর দু:খ কয়েক বছর ধরে বিচিত্র ভঙ্গিতে প্রকাশ পেতে থাকল। 

-একদিকে তার অবস্থা ছিল এই যে, প্রতি জুমআর দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বরে উঠে বসতেন তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই উঠে বলতো, “ভাইসব, আল্লাহর রসূল আপনাদের মধ্যে বিদ্যমান। তাঁর কারণে আল্লাহ তা’আলা আপনাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। তাই আপনারা সবাই তাঁকে সাহায্য, সহযোগিতা করুন। এবং তিনি যা বলেন গভীর মনযোগ সহকারে শুনুন এবং তার আনুগত্য করুন। “(ইবনে হিশাম, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা, ১১১, । 

-অপরদিকে অবস্থা ছিল এই যে, প্রতিদিনই তার মুনাফেকীর মুখোশ খুলে পড়ছিল এবং সৎ ও নিষ্ঠাবান মুসলমানদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল যে, সে ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ইসলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে চরম শত্রুতা পোষণ করে। 


-একবার নবী (সা.) কোন এক পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় পথে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাঁর সাথে অভদ্র আচরণ করে। তিনি হযরত সা’দ ইবনে উবাদাকে বিষয়টি জানালে সা’দ বললেন, “হে আল্লাহর রসূল, আপনি এ ব্যক্তির প্রতি একটু নম্রতা দেখান। আপনার আগমনের পূর্বে আমরা তার জন্য রাজমুকুট তৈরী করেছিলাম। এখন সে মনে করে, আপনি তার নিকট থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন। “(ইবনে হিশাম, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩৭, ২৩৮, । 


-বদর যুদ্ধের পর বনী কাইনুকা গোত্রের ইহুদীরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও অকারণে বিদ্রোহ করলে রসূলুল্লাহ (সা.) তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। 

-তখন এই ব্যক্তি তাদের সমর্থনে কোমর বেঁধে কাজ শুরু করে। সে নবীর (সা.) বর্ম ধরে বলতে লাগলো, এই গোত্রটির সাতশত বীরপুরুষ যোদ্ধা শত্রুর মোকাবেলায় সবসময় আমাকে সাহায্য করেছে।

-আজ একদিনেই আপনি তাদের হত্যা করতে যাচ্ছেন? আল্লাহর শপথ, আপনি যতক্ষণ আমার এই মিত্রদের ক্ষমা না করবেন আমি ততক্ষণ আপনাকে ছাড়বো না। (ইবনে হিশাম, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫১-৫২, । 


-উহুদ যুদ্ধের সময় এই ব্যক্তি খোলাখুলি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যুদ্ধের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে সে তার তিনশত সঙ্গী-সাথীকে নিয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে এসেছে। 

-কি সাংঘাতিক নাজুক মুহূর্তে সে এই আচরণ করেছে তা এই একটি বিষয় থেকেই অনুমান করা যায় যে, কুরাইশরা তিন হাজার লোকের একটি বাহিনী নিয়ে মদীনার ওপরে চড়াও হয়েছিল আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাত্র এক হাজার লোক নিয়ে তাদের মোকাবিলা ও প্রতিরোধের জন্য বেরিয়েছিলেন। -এক হাজার লোকের মধ্যে থেকেও এই মুনাফিক তিনশত লোককে আলাদা করে যুদ্ধের ময়দান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল এবং নবী (সা.) কে শুধু সাতশত লোকের একটি বাহিনী নিয়ে তিন হাজার শত্রুর মোকাবিলা করতে হলো। 


-এ ঘটনার পর মদীনার সব মুসলমান নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারলো যে, এ লোকটি কট্টর মুনাফিক। 

-তার যেসব সংগী সাথী এই মুনাফিকীতে তার সাথে শরীক ছিল তাদেরকেও তারা চিনে নিল। এ কারণে উহুদ যুদ্ধের পর প্রথম জুম’আর দিনে নবীর (সা.) খোতবা দেয়ার পূর্বে এ ব্যক্তি যখন বক্তৃতা করতে দাঁড়ালো তখন লোকজন তার জামা টেনে ধরে বলল: “তুমি বসো, তুমি একথা বলার উপযুক্ত নও।” 

-মদীনাতে এই প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে এ ব্যক্তিকে অপমানিত করা হলো। এতে সে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হলো এবং মানুষের ঘাড় ও মাথার উপর দিয়ে ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল। 

-মসজিদের দরজার কাছে কিছু সংখ্যক আনসার তাকে বললেন, “তুমি একি আচরণ করছো? ফিরে চলো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করো।” 

-এতে সে ক্রোধে ফেটে পড়লো এবং বললো! “তাকে দিয়ে আমি কোন প্রকার ক্ষমা প্রার্থনা করাতে চাই না”। (ইবনে হিশাম, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১১, । 


-হিজরী ৪ সনে বনু নাযীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই সময় এই ব্যক্তি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আরো খোলাখুলিভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুদের সাহায্য সহযোগিতা দান করে।

-একদিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ এসব ইহুদী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

-অপরদিকে এই মুনাফিকরা গোপনে গোপনে ইহুদীদের কাছে খবর পাঠাচ্ছিল যে, তোমরা রুখে দাঁড়াও। আমরা তোমাদের সাথে আছি।

-তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলে আমরা তোমাদের সাহায্য করবো এবং তোমাদেরকে বহিষ্কার করা হলে আমরাও তোমাদের সাথে বেরিয়ে যাব। 

-আল্লাহ তা’আলা তাদের এই গোপন গাঁটছড়া বাঁধার বিষয়টি প্রকাশ করে দিলেন। সূরা হাশরের দ্বিতীয় রুকূ’তে এ বিষয়েই আলোচনা করা হয়েছে। 


-কিন্তু তার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের মুখোশ খুলে পড়ার পরও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কার্যকলাপ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। 

-কারণ মুনাফিকদের একটা বড় দল তার সহযোগী ছিল। আওস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের বহু সংখ্যক নেতা তার সাহায্যকারী ছিল। 

-কম করে হলেও মদীনার গোটা জনবসতির এক তৃতীয়াংশ ছিল তার সাঙ্গপাঙ্গ। উহুদ যুদ্ধের সময় এ বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছিল। 

-এই পরিস্থিতিতে বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার সাথে সাথে আভ্যন্তরীণ শত্রুর সাথেও যুদ্ধের ঝুঁকি নেয়া কোন অবস্থায়ই সমীচীন ছিল না। 

-এ কারণে তাদের মুনাফিকী সম্পর্কের অবহিত থাকা সত্ত্বেও নবী (সা.) দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাহ্যিকভাবে ঈমানের দাবি অনুসারেই তাদের সাথে আচরণ করেছেন। 

-অপরদিকে এসব লোকেরও এতটা শক্তি ও সাহস ছিল না যে, তারা প্রকাশ্যে কাফের হয়ে ঈমানদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করত অথবা খোলাখুলি কোন হামলাকারী শত্রুর সাথে মিলিত হয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হতো। 

-বাহ্যত তারা নিজেদের একটা মজবুত গোষ্ঠী তৈরী করে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে বহু দুর্বলতা সূরা হাশরের ১২ থেকে ১৪ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবে সেইসব দুর্বলতার কথাই তুলে ধরেছেন। 

-তাই তারা মনে করতো মুসলমান সেজে থাকার মধ্যেই তাদের কল্যাণ নিহিত। তারা মসজিদে আসত, নামায পড়তো এবং যাকাতও দিতো। 

-তাছাড়া মুখে ঈমানের লম্বা চওড়া দাবি করতো, সত্যিকার মুসলমানদের যা করার আদৌ কোন প্রয়োজন পড়তো না। 

-নিজেদের প্রতিটি মুনাফিকী আচরণের পক্ষে হাজারটা মিথ্যা যুক্তি তাদের কাছে ছিল। এসব কাজ দ্বারা তারা নিজেদের স্বগোত্রীয় আনসারদেরকে এই মর্মে মিথ্যা আশ্বাস দিত যে, আমরা তোমাদের সাথেই আছি। 

-আনসারদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হলে তাদের অনেক ক্ষতি হতো। এসব কৌশল অবলম্বন করে তারা যেসব ক্ষতি থেকে নিজেদের রক্ষা করেছিল। 

-তাছাড়া তাদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ থেকে মুসলমানদের ভেতরে কলহ কোন্দল ও ফ্যাসাদ সৃষ্টির এমন সব সুযোগও তারা কাজে লাগাচ্ছিল যা অন্য কোন জায়গায় থেকে লাভ করতে পারত না। 


-এসব কারণে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ মুনাফিকরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বনী মুসতালিক যুদ্ধাভিযানে শরীক হওয়ার সুযোগ লাভ করেছিল এবং এই সুযোগে একই সাথে এমন দুটি মহাফিতনা সৃষ্টি করেছিল যা মুসলমানদের সংহতি ও ঐক্যকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারত। 

-কিন্তু পবিত্র কুরআনের শিক্ষা এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সাহচর্য থেকে ঈমানদাগণ যে সর্বোত্তম প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন তার কল্যাণে যথা সময়ে এ ফিতনার মুলোৎপাটন হয়ে যায় এবং এসব মুনাফিক নিজেরাই অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। 

-এ দুটি ফিতনার মধ্যে একটির উল্লেখ করা হয়েছে সূরা নূরে। আর অপর ফিতনাটির উল্লেখ করা হয়েছে আলোচ্য এই সূরাটিতে। 


সুরার বিষয়বস্তু:

১. মুনাফিক ও তাদের আচরণ।

২. তারা রাসুল সা. এর কাছে দু'আ প্রার্থী নয়।

৩. দুনিয়ার মোহে না পড়ার আহবান।

৪. মৃত্যুর পূর্বেই বেশি বেশি দান করা।


ব্যাখ্যা:

৯নং আয়াত: "ধন সম্পদ ও সন্তানাদির মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া, এরূপ ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্থ"

-জুইয়িনা লিন্নাসি হুব্বুশ শাহাওয়াতি....(আলে ইমরান: ১৪)

-কুল ইন কানা আবায়ুকুম...(তাওবা: ২৪)

-ইন্না মিন আজওয়াজিকুম ও আওলাদিকুম আদুয়াল লাকুম ফাহজারুহুম (তাগাবুন: ১৪)

[তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, তাদের ব্যাপারে সতর্ক হও]

-ই'লামু আন্নামাল হায়াতিদ দুনিয়া..(হাদীদ: ২০)

-ও আনজির আশিরাতাকাল আকরাবিন

-রাব্বানা আরিনাল লাদাইনি আদাল্লানা...

-ধনী ব্যক্তিদের অজুহাতের মোকাবিলায় আল্লাহ সুলাইমান আ. কে পেশ করবেন

-আল মালু ওল বানু জিনাতুন হায়াতিদ দুনিয়া

-ইয়াওমা লা ইয়ান ফায়ু মালু ওলা বানু...

-ওমাল আকসারুনা আমওয়ালা (হাদিস)

-আল হাকুমুত তাকাসুর...(তাকাসুর: ১-২)

-যত বড় ব্যবসায়ী তত আন্দোলন থেকে পিছিয়ে

-সন্তানের মোহে পড়ে তাদেরকে আন্দোলনের পথে আসতে দেয় না

-সন্তানের ব্যাপারে পরীক্ষা দিতে হবে ইব্রাহিম আ: এর মত


১০নং আয়াত: "মৃত্যু আসার আগেই দান সাদকা করো, না হয় তোমরা আফসোস করবে আর আল্লাহ কাছে সাদকা ও নেক আমল করার জন্য অবকাশ চাইবে"

-আল্লাযিনা ইয়ানফিকুনা ফিস সাররাহি ওদ দাররাহি (আলে ইমরান: ১৩৪)

-রিযিক থেকে দান করতে হবে (বাকারা:৩)

-বেলাল, আবু বকর আর ওসমানের দান

-ও তুজাহিদুনা ফি সাবিল্লাহি বি আমওয়া লিকুম ও আনফুসিকুম

-ইয়া লাইতানি কুনতু তুরাবা (নাবা:৪০)

-ইয়াকুলু ইয়া লাইতানি কদ্দামতু লি হায়াতিহি (ফজর: ২৪)

-আল বাহারু আরবায়া, মওত/আমান, হায়াত/মাওয়া, মাওয়া/জুনুব, আল কবরু বাহারুন নাদামা (ওমর রা.)


১১নং আয়াত: "মৃত্যু যখন আসবে কাউকে আর অবকাশ দেয়া হবে না আর তোমাদের কাজ সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত"

-ফাইযা জায়া আজালুহুম...(নাহল:৬১)

-ফা ইযা জায়া আজালুহুম লা ইয়াস তাখিরুনা সায়াতাও ওলা ইয়াস তাকদিমুন (আরাফ: ৩৪)

-কাল্লা ইযা বালাগাতিত তারাকিয়া ওকিলা মান রাক (কিয়ামাহ: ২৬-৩০)

-স্ত্রীর ক্রন্দন, সন্তানের আহাজারি মওতের বধির কর্ণে কোন আওয়াজ পৌঁছে না

-ইকতারাবা লিন্নাসি হিসাবুহুম...(আম্বিয়া:১)

-আকসিরুজ জিকরি হাজিমিল লাজ্জাতিল মাওত (আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত হাদিস)

-Death keeps no calendar 

-কাম তারাকু মিন জান্নাতিন ও উয়ুন, ও জুরুইন ও মাকামিন কারীম, ও না'মাতি কানু ফিহা ফাকিহিন, কাজালিকা ও আওরাস নাহা কাওমান আখারীন (দুখান: ২৫-২৮)

Post a Comment

0 Comments

Close Menu